Thursday, June 23, 2011

ভাইরাস জগতে এখনও বেঁচে আছেন বিন লাদেন-----------সাবধান! ছদ্মবেশী 'তারকা' ভাইরাস

যুক্তরাষ্ট্রের এলিট বাহিনীর হাতে সম্প্রতি নিহত আল কায়েদার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেন-এর নামের আড়ালে লুকিয়ে আছে নানা রকম ভাইরাস। তার মৃত্যুর খবর চাউর হওয়ামাত্রই ছড়াতে থাকে তার নামধারী নানা ভাইরাস। কোনো কোনো লিংকে বলা হয়, এখানে ক্লিক করলে দেখা যাবে লাদেনের মৃত্যুর সময়ের ছবি এবং ভিডিও। তার লাশের ছবি বিষয়েও বেশ কিছু ভাইরাস ছড়ায়।

তবে মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনী সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছে, লাদেনের লাশের কোনো ছবি বা ভিডিও তারা প্রকাশ করেনি। তাই ইন্টারনেট জুড়ে ছড়িয়ে পড়া এসব লিংকগুলো যে ভাইরাস সে কথাটি সবারই জানা হয়ে যায়। বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর সময়ের ছবি বা ভিডিও খোলার ব্যাপারে সচেতন হবার কথা জানিয়েছিলো কম্পিউটার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সফোস-এর বিশেষজ্ঞরাও। এফবিআই সতর্ক করে জানিয়েছিলো, ওসামা’র ছবিযুক্ত মেইল খোলার ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরী, কারণ এটি ভাইরাস হতে পারে এবং তা কম্পিউটারে চালু হয়ে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে নিতে পারে।

লাদেনের মৃত্যুর বিষয়ে মানুষের কৌতূহলকে কাজে লাগিয়ে সাইবার অপরাধীরা এ ম্যালওয়্যার ছড়ানোর সুযোগ নিয়েছিলো। ওসামা ভাইরাস বিষয়ে বলা হয়েছে, এ ভাইরাসটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এটি যথেষ্ট শক্তিশালী এবং একবার সিস্টেমে ঢুকে গেলে কম্পিউটারে পাকাপোক্তভাবে  নিজের জায়গা করে নিতে পারে। এবং কম্পিউটার সিস্টেমে একের পর এক হামলা চালিয়ে যেতে পারে।



পামেলা এন্ডারসন ভাইরাস
এটি মুলতঃ এক্সিকিউটেবল (বা ইএক্সই) ফাইল। গ্ল্যামার জগতে পামেলার খ্যাতি কাজে লাগিয়ে তার নামে ইএক্সই ফাইল বানিয়ে ভাইরাস ছড়ানোর কাজে লেগে রয়েছে সাইবার অপরাধীরা। পামেলা ভাইরাসটিতে ক্লিক করলে এটি অপারেটিং সিস্টেমে ঢুকে যায় এবং কম্পিউটারে গতি কমিয়ে ফেলে। এ ছাড়াও ব্যক্তিগত তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশসহ ফাইল চুরি করা এই ভাইরাসের প্রধান কাজগুলোর একটি।


পপ কিংও হাজির ভাইরাসে!
প্রয়াত পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের গান, ছবি এবং মিউজিক ভিডিও-এর আড়ালে লুকিয়ে থাকে এই ভাইরাসটি। ভাইরাসটি জ্যাকসনের মৃত্যুর পর ছড়িয়ে পড়েছিলো সবচেয়ে বেশি। পপ সম্রাটের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে লোভ দেখিয়ে ইমেইল এর মাধ্যমে কম্পিউটারে নিজের জায়গা করে নিতে ওস্তাদ এই ভাইরাস। তারপর নিজে থেকেই কম্পিউটারে মধ্যে কপি হয়ে অন্যান্য কম্পিউটারেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ২০০৯ সালে সফোস-এর বিশেষজ্ঞরা এই ভাইরাসটি বিষয়ে সতর্ক করে দেন।


কুর্নিকোভা ভাইরাস
টেনিস এবং ফ্যাশনে দুটি দুনিয়ায় আনা কুর্নিকোভা সুপারস্টার। তার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করেও ভাইরাস ছড়িয়েছে। তার নামের ভাইরাস প্রথম দৃষ্টিগোচর হয় ২০০১ সালে। টেনিস তারকার ছদ্মবেশে কম্পিউটারে ঢুকে সরাসরি আক্রমণ করে বসে উইন্ডোজ ডিরেক্টরিতে। এটি উইন্ডোজ কে আক্রমণ করেই ক্ষান্ত না দিয়ে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ আউটলুক অ্যাড্রেস বুক ব্যবহার করে অন্যান্য কম্পিউটারেও মেইল হিসেবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি কম্পিউটার অভারলোডিং এবং কম্পিউটার অচল করার কারণ।


ব্রিটনি স্পিয়ার্স ভাইরাস
‘হিট মি বেবি ওয়ান মোর টাইম’ খ্যাত পপ তারকা ব্রিটনি স্পিয়ার্স যেমন সচরাচর সংবাদের শিরোনাম হন এবং তাকে ঘিরে প্রায়ই কোনো না কোনো ঘটন-অঘটনের সংবাদ ছাপা হতে থাকে তেমনি তার নামের ভাইরাসওটিও যে কোনো সময় ওয়ান মোর টাইম হিট করে বসতে পারে আপনার পিসি। ২০০২ সালে ইন্টারনেটে ব্রিটনি’র ছবির মাধ্যমে এই ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়ার শুরু। ভিবিএস/ব্রিটনি-এ’ নামের এই ভাইরাসটি কম্পিউটারের কাজ করার গতি কমিয়ে ফেলাসহ মেইল এমনকি ইন্টারনেটের গতিই কমিয়ে ফেলে।


নতুন সেনসেশন ‘মাইলি সাইরাস’
মাইলি.ইএক্সই নামের এ ভাইরাসটি পপ তারকা মাইলি সাইরাসের ‘সি ইউ এগেইন’ গানটি শোনার ‘সুযোগ দেয়’ ব্যবহারকারীদের। এরপর সে সুযোগে এটি কম্পিউটারে ঢুকে পড়ে কম্পিউটার অচল করে দেয়। পরে এটি কম্পিউটার থেকে মুছে ফেলতে হিমসিম খেতে হয় ব্যবহারকারীদের।


ভাইরাস অ্যাঞ্জেলিনা জোলি!
হলিউডি তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি’র নামে এই ভাইরাসটি মূলত ট্রোজান ফাইল। ২০০৮ সালে এই ভাইরাসটির প্রসার ঘটে। ‘এই মেইলে জোলির ন্যুড ছবি আছে’ এমন মেইলে ক্লিক করলে এই ভাইরাসটি কম্পিউটারে ঢুকে পড়ে। আবেদনময়ী জোলি’র ছদ্মবেশে থাকা এই ভাইরাস মেইলটির ডাউনলোড করার আবেদনে সাড়া দিয়ে যারা লিংক টি ডাউনলোড করে ফেলেন তাদের কম্পিউটারে ঢুকে প্রথমেই অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারকে অচল করে নিজে নিজে নতুন প্রোগ্রাম সাজাতে শুরু করে এই  অ্যাঞ্জেলিনা ভাইরাসটি।


হ্যারি পটার ভাইরাস
হ্যারি পটার-এর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে এই ভাইরাসটি খুব নাটকীয়ভাবে কম্পিউটারে প্রবেশ করে। ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হলোস’ প্রি রিলিজ হয়েছে এমন খবরটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাঝে একটি ডক ফাইল এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে অনায়াসে এটি তার রাজত্ব শুরু করে। এই ভাইরাসটি প্রথম নজরে আসে ২০০৭ সালে। ভাইরাসটিতে হ্যারি পটার-এর দুই বন্ধু  হারমিওন, গ্রেঞ্জার ও রন উইসলির ছবি এবং ফোন নম্বর দেয়া হয়েছে বলেও ঠকানো হয়। হ্যারি-পটার ভক্তরা যারা এই ভিডিও ফাইলটি দেখার জন্য ক্লিক করেছেন  তাদের ইন্টারনেটের হোম পেজকে অন্য একটি ওয়েবসাইট এ নিয়ে যায়। যেখানে নকল হ্যারি পটার উপন্যাসটির একটি মোড়কও দেখানো হয়। এটিও ডাউনলোড করার নির্দেশ করে ভাইরাসটি।


জেনিফার অ্যানিস্টোন স্ক্রিনসেভার ট্রোজান
অভিনেত্রী জেনিফার অ্যানিস্টোন এর স্ক্রিনসেভার ডাউনলোড করার জন্য আবেদন করে এই ভাইরাসটি। এই স্ক্রিনসেভারে ক্লিক করা হলে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি ও অপ্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে এই ভাইরাসটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বিরক্ত করতেই থাকে। এটি মুলত ট্রোজান ভাইরাস। সাধারণ সফটওয়্যার ডাউনলোড কিংবা অ্যান্টিভাইরাস স্ক্যানের আদলে এই ভাইরাসটি কম্পিউটারে প্রবেশ করে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়।


বিয়ন্সি নোয়েলস রিংটোন ভাইরাস
বিয়ন্সি নোয়েলস-এর রিংটোন ডাউনলোড-এর আবেদন জানিয়ে ভাইরাসটি নিজেও ডাউনলোড হয় ব্যবহারকারীর অজান্তেই। এই ভাইরাসটি ব্যাংক-এর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এমনকি পাসওয়ার্ড চুরি করে নিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খ্যাতিমান ব্যক্তিদের নামের আড়ালে থাকা ভাইরাস শনাক্ত করেছেন এবং সে বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতাই জরুরী। নির্ভরযোগ্য কম্পিউটার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সতর্কতার দিকে চোখ রাখা, না বুঝে অপ্রয়োজনীয় কোনো লিংকে ক্লিক না করা, সর্বোপরি ছদ্মবেশী ভাইরাসগুলোকে চিনে রাখাই ভাইরাস প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। এ ছাড়া কম্পিউটারে হালনাগাদ অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করেও ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকা যায়। আপনার কম্পিউটার ছদ্মবেশী ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকুক।

No comments:

Post a Comment